ভালোলাগা ভালোবাসা

মানুষের জন্য কিছু করার ইচ্ছা থেকেই “কান পেতে রই” তে আসা। বিষয়বস্তুর কারণে কাজটা
আমাকে প্রচন্ড টানছিলো। ভাত কাপড়ের মত নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস দিয়ে মানুষকে সাহায্য
করার কাজটা ইচ্ছা থাকলেই করা যায় এবং প্রচুর মানুষ সেটা করছে। কিন্তু আমাদের সমাজে
মানসিক ভাবে বিপদগ্রস্থ একজন মানুষকে সাহায্য করার কথা খুব কম মানুষই ভাবে। তাছাড়া
আত্মহত্যার বিষয়টি আমাকে খুব কষ্ট দিতো। যখন জানলাম এখান থেকে আমি আত্মহত্যা
প্রবন মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারবো, তখন অন্যরকম এক ধরনের ভালো লাগা কাজ করছিলো।
আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। নিজেকে একজন উদার, সহমর্মী ও সহনশীল মানুষ বলেই
জানতাম। জানায় ভুল ছিলোনা, তবে ঘাটতি ছিলো। নিজেকে সঠিকভাবে মাপতে পেরেছিলাম “কান
পেতে রই” এর ট্রেনিং এর পর থেকে। আগেকার জানা আর পরের জানায় ছিলো বিস্তর ফারাক।
ভেবেছিলাম কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেই মানসিক সমস্যাগ্রস্থ মানুষগুলোকে সাহায্য
করতে শুরু করব। কিন্তু কাজটা করতে হলে যে নিজেকে কতখানি বদলে ফেলতে হবে, কল্পনাও
করতে পারিনি। ট্রেনিংটা আমার সামনে ধরা একটা আয়নার মত কাজ করেছিলো।

কান পেতে রইতে কাজ শুরু করার আগেও আমার আশে পাশের মানুষের মানসিক বিপর্যস্ততায়
পাশে থাকার চেষ্টা করতাম। কিন্তু এখানের ট্রেনিং এর পরে বুঝেছিলাম আমার সে চেষ্টায়
কত কিছু ভুল ছিলো। সাদা চোখে কখনোই যেগুলোকে ভুল বলে মনে হবে না। একটা ছোট্ট কথাও
যে একজন মানুষকে কতটা প্রভাবিত করতে পারে সেটা শিখেছি এখান থেকে। সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ হলো আমার নিজের মধ্যকার সমস্যাগুলো ধরতে পেরেছি এখানে এসে। এখনকার
আমি আর আগের আমির মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ। সে শুধু “কান পেতে রই” এর জন্যই।
ভাবলে অবাক লাগে, এক সময় না জানার কারনে আশে পাশের মানুষগুলোর ভুল যুক্তির সঙ্গে
তাল মেলাতাম। খারাপ লাগে যে, মানুষজন নিজের অজান্তে একজন বিপদগ্রস্থ মানুষকে আরও
বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

এই সংগঠনটি আমাকে মানবিকতার শক্তিকে কাজে লাগাতে শিখিয়েছে। শিখিয়েছে যে সঠিক
ধারনা, উপযুক্ত প্রশিক্ষন আর আন্তরিকতা থাকলে মানসিক বিপর্যস্ত একজন মানুষকে
সাহায্য করা, এমনকি তার মধ্য থেকেই সমাধান বের করে আনা সম্ভব। ধর্ম, বর্ণ, সংস্কৃতি,
বিশ্বাসে মত কোন ভিন্নতাই এ ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। যতগুলো ভালো সিদ্ধান্ত
আমার জীবনে উল্লেখযোগ্য হয়ে থাকবে তার মধ্যে “কান পেতে রই” এর সাথে যুক্ত হওয়ার
সিদ্ধান্তটা অন্যতম একটা। ভালো লাগার জায়গা এই যে, উপকার হোক বা না হোক অন্তত এই
ক্ষেতে কারও বিপদের কারণ হবনা।

কাজের পরিবেশ, সহকর্মীদের কথা কিছু না বললেই নয়। কান পেতে রইকে আমার মনে হয়
আলোকিত সমাজের ছোট্ট একটা উদাহরণ। যেকোন সমস্যায় সবাই সবার পাশে থাকে। যেন
একই পরিবারের সদস্য সবাই। ভলান্টিয়ারদের মধ্যকার সুন্দর সম্পর্ক মানসিক ভিত্তিটাকে
আরো মজবুত করে তোলে। কারও আন্তরিকতার কমতি নেই। সবচেয়ে অসাধারণ দিকটা হলো,
এখানে কারো কোন ধরনের স্বার্থ জড়িয়ে নেই। শুধুমাত্র মানবতাবোধ থেকে আন্তরিকতার
সাথে কাজ করে যাচ্ছে ভলান্টিয়াররা।

এমন একটা সংগঠনের সাথে জড়িত থাকাটা সত্যিই আনন্দের। ভালোলাগার “কান পেতে রই”।
ভালোবাসার “কান পেতে রই”।

- আফরীন সুমু

Comments

Popular posts from this blog

আমার প্রিয় ৫০টি বই - মুহম্মদ জাফর ইকবাল

শেয়ারিং ইজ কিউরিং এবং কান পেতে রই

পাশে থাকতে শেখা - নিজের এবং অন্যের