আমার প্রিয় ৫০টি বই - মুহম্মদ জাফর ইকবাল
আমার প্রিয় ৫০টি বই
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
প্রথমেই বলে
রাখি, কেউ যেন মনে না করে এই পঞ্চাশটি বইয়ের বাইরে আমার প্রিয় বই নেই, অবশ্যই আছে,
এই বইগুলো দিয়ে আমি শুরু করেছি। কেউ এক নজর দেখলেই বুঝতে পারবে সমকালীন বাংলাদেশের
লেখকদের কোনো বই এখানে নেই (শুধু শাহীন আখতারের তালাশ বইটি রেখেছি, কেউ এটা পড়লেই বুঝতে
পারবে কেন তাঁর বইটা আলাদাভাবে রেখেছি।) মনে হচ্ছে এই তালিকাটিতে অনেকের আগ্রহ আছে
যেটা দেখে আমি অসম্ভব খুশি হয়েছি।সমকালীন লেখকদের বইয়ের নাম দেয়া হলে যদি ভুলে
কারো নাম লিখতে ভুলে যাই, কিংবা এখনো পড়া হয়নি বলে যদি কারো নাম দেওয়া না হয় তাহলে
সেই লেখকের উপর আমার পক্ষ থেকে অনেক বড় অন্যায় করা হবে, আমি সেটা করতে চাই না,
সেজন্য এই তালিকায় তাদের কোনো বইয়ের নাম নেই। সমকালীন লেখকদের নাম আমি আরেকটু
চিন্তা ভাবনা করে দেব।
এটা সত্যিকারের
প্রিয় বইয়ের তালিকা হলে এক লেখকের অনেক বই চলে আসতো, কিন্তু ইচ্ছা করে একজন লেখকের
মাত্র একটা করে বইয়ের নাম দিয়েছি। তালিকায় কোন বই আগে এসেছে, কোনটা পরে এসেছে তার পেছনে
কোনো নিয়ম নেই, এটি পুরোপুরি এলোমেলো!
এখানে আরেকটা বিষয় আমি সবাইকে মনে করিয়ে
দিতে চাই। আমার কাছে যে বইগুলো ভালো লেগেছে সেটা সবার ভালো লাগতে হবে, কিংবা
সবাইকে জোর করে হলেও সেগুলো পড়তে হবে সেটা একেবারেই সত্যি নয়। যার যেটা ভালো
লাগবে, সে সেটা পড়বে। কী পড়ছে সেটা নিয়ে কারো মনে যেন বিন্দুমাত্র হীনমন্যতা না
থাকে। একজন কিছু একটা পড়ছে সেটাই হচ্ছে বড় কথা।
উপন্যাস
1.
East
of Eden : John Steinbeck
এটি নিঃসন্দেহে আমার
সবচেয়ে প্রিয় উপন্যাস। কেউ যদি মনে করে লেখকেরা কীভাবে লিখে সেটা বোঝার জন্য সে
জীবনে একটা মাত্র বই পড়বে তাহলে তার এই বইটা পড়া উচিত। আগে থাকেই সাবধান করে
দিই, বইটা বেশ মোটা। বাংলা অনুবাদ আছে কীনা জানা নেই, কিন্তু আমি সবাইকে বলব, বাংলা
অনুবাদ থাকলেও পড়তে চাইলে এটা স্টেইনবেকের নিজের লেখা ভাষাতেই পড়া উচিত। অসাধারণ
একটা উপন্যাস! অসাধারণ!
2.
For
Whom the Bell Tolls : Ernest Hemingway
আমি প্রথমবার যখন এই
বইটা পড়েছিলাম, তখন বিস্ময়ে আমি এতো অভিভূত হয়েছিলাম যে পড়া শেষ করে সাথে সাথে
আবার গোড়া থেকে পড়তে শুরু করেছিলাম। বাংলাদেশে আছে কীনা জানি না, কিন্তু মনে হয় পশ্চিম
বাংলায় ভালো বাংলা অনুবাদ আছে।
3.
Three
Comrades : Erich Maria Remarque
যদিও এরিক মারিয়া
রেমার্ক বিখ্যাত তার “অল কোয়ায়েট ইন দা ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট” বইয়ের জন্য কিন্তু তার
লেখা আমার সবচেয়ে প্রিয় বই হচ্ছে “থ্রি কমরেডস”। বন্ধুত্বের উপর এতো
সুন্দর বই মনে হয় খুব কম লেখা হয়েছে।
4.
কবি : তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
আমি জনি না আজকালকার
ছেলেমেয়েরা তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের বই পড়ে কীনা। আমরা তাঁর বই পড়ে বড় হয়েছি। কোন বইয়ের নাম দেব
সেটা নিয়ে একটু দ্বিধার মাঝে ছিলাম শেষ পর্যন্ত এটাই দিলাম। এই বইয়ে সেই বিখ্যাত
লাইনটি আছে, “কালা যদি মন্দ হবে গো, তবে কেশ পাকিলে কান্দো কেন হায়...”
5.
পথের পাঁচালি : বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
সত্যজিত রায়ের কল্যানে
পথের পাঁচালির নাম সবাই শুনেছে। তবে সিনেমা থেকে বইটা আমার অনেক বেশি প্রিয়।
6.
পদ্মা নদীর মাঝি : মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
তাঁর কোন বইয়ের নাম দেব
সেটা নিয়ে অনেক জল্পনা কল্পনা করতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত পরিচিত বইটাই দিয়েছি।
(আমাদের পুরো পরিবারের প্রিয় লেখক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, তার পিছনে একটা চমৎকার গল্পও আছে।)
7.
পথের দাবী : শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
আজকালকার ছেলেমেয়েরা কী শরৎচন্দ্রের
বই পড়ে, নাকী তার উপন্যাসের উপর হিন্দীতে তৈরি করা “দেবদাস” সিনেমাটি দেখেই খুশি? শরৎচন্দ্রের
কিছু বই না পড়লে বাংলা ভাষায় লেখা উপন্যাসের মিষ্টি ভাবটুকু বোঝা যাবে না। বলা
যেতে পারে শরৎচন্দ্র ছিলেন সেই সময়কার হুমায়ুন আহমেদ, অসম্ভব জনপ্রিয়!
8.
Three
man in the boat : Jerome K. Jerome
অনেকেই মনে করতে পারে,
পৃথিবীতে এতো বই থাকতে, হুট করে এই বইটার নাম কোথা থেকে চলে এলো? আসলে এট আমাদের
পারিবারিক ভালোবাসার বই। আমার বাবা এই বইটা পড়ে শোনাতেন, আমরা মা-ভাইবোন বাবাকে
ঘিরে বসে সেটা শুনে হেসে কুটি কুটি হতাম। বাংলা অনুবাদ আছে, নামটা যতদূর মনে পড়ে “এক
নায়ে তিনজন, কুত্তাটা ফাউ”!
9.
Carry
on, Jeeves : P. G. Wodehouse
উডহাউস পড়তে হলে একটু
ভিন্ন ধরনের সেন্স অফ হিউমার থাকতে হয়, জানি না সবার সেটা আছে কীনা।
10.
My
Universities : Maxim Gorky
আমি যখন বইটা পড়তে শুরু
করেছিলাম তখন ভেবেছিলাম ম্যাক্সিম গোর্কি বুঝি তার সত্যিকারের বিশ্ববিদ্যালয়ের
কাহিনী বলছেন। পড়ার পরে বুঝেছিলাম আসলে গোর্কি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ
পাননি, সাধারণ শ্রমিকের মত বড় হয়েছেন। এই পৃথিবীটা হচ্ছে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় বইটা আমার কাছে ছিল, দুঃসময়ে টিকে থাকার সাহসের জন্য আমি তখন
বইটা পড়তাম। ইচ্ছে করে এটাকে জীবনী হিসেবে না রেখে উপন্যাস হিসেবে রেখেছি।
11.
তিথিডোর : বুদ্ধদেব
বসু
যখন বইটা প্রথমবার
পড়েছিলাম, তখন অন্যরকম একটা উপন্যাস মনে হয়েছিল। এখন পড়লে কেমন লাগবে জানি না।
শুনেছি বুদ্ধদেব বসু নাকি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ছিলেন, সে জন্য তার উপর এমনিতেও আমি একটু
বিরক্ত। কিন্তু বইটি তো ভালো সেটা আমি অস্বীকার করি কীভাবে?
12.
Vagabonds : Knut Hamsun
খুবই মিষ্টি একটা
উপন্যাস। কিন্তু নরওয়ের এই কালজয়ী সাহিত্যিক নাৎসি সমর্থক ছিলেন। তার বইটা রাখা
ঠিক হল কীনা, বুঝতে পারছি না, কিন্তু কেউ তো অস্বীকার করতে পারবে না, এটা খুবই
মিষ্টি একটা বই।
13.
The
Adventures of Tom Sawyer : Mark Twain
শৈশবে এই বইটা পড়ে আমার
পুরো চিন্তার জগৎটা পালটে গিয়েছিল। অবাক হয়ে ভেবেছিলাম এতো সুন্দর কিশোর উপন্যাস
হতে পারে? বলা যায় আমি সারা জীবন “টম সয়ার”এর মত একটা বই লেখার চেষ্টা করে এসেছি।
14.
The
Tin Drum : Gunter Grass
বইটা যথেষ্ট
ইন্টারেস্টিং কিন্তু বিজ্ঞানের বিষয় নিয়ে সিরিয়াস সমস্যা আছে। দেখি কে বের করতে
পারে। (অনেক লেখক অবশ্য ইচ্ছা করে ভুলভাল অবাস্তব কথা বলে সেটাকে গালভরা একটা নাম
দেয়: “জাদু পরাবাস্তবতা”। বইগুলো অসাধারণ তাই আমরা মেনে নেই।)
15.
লাল গোলাপ : সৈয়দ শামসুল হক
খুবই ছোট একটা বই। এটা পড়ে আমার এত ভালো লেগেছিল যে ভয়ের চোটে বহুদিন দ্বিতীয়বার
পড়িনি, যদি আগের মত ভালো না লাগে? কিছুদিন আগে আবার পড়েছি, আগের মতই ভালো লেগেছে।
(এই অসাধারণ লেখক আমাকে তাঁর লেখা একটা বই উৎসর্গ করেছেন, বিশ্বাস হয়?)
16.
প্রদোষে প্রাকৃত জন : শওকত আলী
আমি জানি না, এই অসাধারণ
উপন্যাসটা কেমন করে এতোদিন আমার চোখের আড়ালে রয়ে গিয়েছিল। মাত্র সেদিন আমি
প্রথমবার পড়েছি। প্রাচীন বাংলার প্রেক্ষাপটে লেখা অত্যন্ত আধুনিক একটা উপন্যাস।
17.
The Color Purple : Alice Walker
এই বইটা নিয়ে খুব সফল
সিনেমা হওয়ার কারণে বইটা চোখের আড়ালে রয়ে গেছে। আমার ধারণা বইটার কোনো তুলনা নেই। প্রচলিত
ইংরেজীর প্রেক্ষাপটে “ভুল” বানান আর “ভুল” উচ্চারনে পুরো বইটা লেখা হয়েছে, বই
পড়াটাই একটা অভিজ্ঞতা।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের উপর
লেখা রাশিয়ান বই। আমাদের সময় রাশিয়ান বইয়ের অতি চমৎকার অনুবাদ পেতাম, অনেক সখ করে
পড়েছি। যুদ্ধের উপর এরকম বই আমি খুব কম পড়েছি।
19.
Matilda
: Roald Dahl
রোল্ড ডাল হচ্ছেন আরেকজন
অসাধারণ লেখক যার বই পড়ে আমার প্রায় মাথা খারাপ হয়ে যাবার অবস্থা। একটা বই থেকে
আরেকটা বই আরো বেশি ভালো। সবচেয়ে মজার হচ্ছে তার ছোট গল্পগুলো, যদিও এখানে আমি
বাচ্চাদের একটা বই দিয়েছি।
20.
The
Amphibian : Alexander
Belyaev
বইয়ের তালিকায় একমাত্র
সায়েন্স ফিকশান। বইটি যেরকম চমকপ্রদ বইয়ের লেখক আলেক্সান্দার বেলায়েভের জীবনটাও
সেরকম চমকপ্রদ। আমার “সেরিনা” বইটির মূল চরিত্রও এই বইয়ের চরিত্রের মত।
21.
Little
House on the Prairie : Laura Ingalls Wilder
আমেরিকায় যখন প্রথম বসতি
গড়ে উঠছিল সেই সময়কার কাহিনী। অনেকগুলো বইয়ের এটা প্রথমটি। আমি শৈশবে পাবলিক
লাইব্রেরিতে বসে বসে এর বাংলা অনুবাদ পড়েছিলাম। মাত্র কিছুদিন আগে জানতে পেরেছি
সেই বইগুলো অনুবাদ করেছিলেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। যদি আগে জানতাম তাহলে তাঁকে
আমি বলতে পারতাম তাঁর অনুবাদগুলো শৈশবে আমাদের কতো আনন্দ দিয়েছে।
22.
Death
in the Andes : Mario Vargas Llosa
খুবই শক্তিশালী লেখক। তার
লেখা একটা বই পড়লেই বোঝা যাবে, এই লেখকদের ক্যানভাস কতো বড় আর আমাদের লেখকেরা কত
একটা ছোট ক্যানভাসে লেখালেখি করেন।
23.
তালাশ : শাহীন আখতার
শুরুতে যেটা বলেছিলাম,
আমার একমাত্র বাংলাদেশের সমসাময়িক লেখকের বই। বীরাঙ্গনাদের নিয়ে লেখা বই, আগেই বলে
রাখি বইটা পড়া হলে মনে হবে বুকটা ফেটে যাচ্ছে।
24.
One
Hundred Years of Solitude : Gabriel Garcia Marquez
এই বইয়ের নাম না দিলে
সবাই আমাকে নিয়ে নাক শিটকাবে!! ঠাট্টা করলাম, আসলে যারা পৃথিবীর সেরা বই পড়তে চায়
তাদের সবারই এই বইটা পড়া উচিত। বাংলা অনুবাদ আছে কিন্তু অনুবাদটা কেমন জানি না।
ভালো অনুবাদ না হলে বই পড়ে লাভ নেই। বইটা যথেষ্ট মোটা এবং চরিত্রগুলোর নাম মনে
রাখা মোটামুটি জটিল ব্যাপার। কিন্তু বইটার কাহিনী এত চমকপ্রদ যে না পড়া পর্যন্ত
সেটা বলে বোঝানো যাবে না। (আগে থেকে সাবধান করে দিই, প্রচুর জাদু
পরাবস্তবতা আছে!)
25.
একা এবং কয়েকজন : সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় নিজের হাতে আমাকে আর ইয়াসমীনকে এই বইটায় অটোগ্রাফ দিয়েছেন।
আমি অবশ্যি সেই জন্যে এই বইটার নাম দিইনি, নাম দিয়েছি তার কারন এই বইটা তাঁর লেখা
আমার খুব প্রিয় একটা বই। যখন এই উপন্যাসটা ধারাবাহিক ভাবে দেশ পত্রিকায় বের হতো,
তখন আমি বুভুক্ষের মত পরের সংখ্যার জন্য অপেক্ষা করতাম।
26.
বালিকা বধূ : বিমল কর
খুবই সুইট বই। তবে সমাজ সচেতন মানুষেরা কম বয়সী মেয়ের বিয়ে দেওয়ার জন্য আজকাল বিরক্ত হতে
পারেন!
এটি ওমর খৈয়ামের জীবনীর উপরে লেখা
কিন্তু তারপরেও এটাকে আমি উপন্যাসে জায়গা দিয়েছি। এটা যে কোনো উপন্যাস থেকেও বেশি
চমকপ্রদ। ভালো বাংলা অনুবাদ থাকার কথা।
28.
The
Insulted and Humiliated : Fydor Dostoyevosky
দস্তায়েভস্কির একটা বই
না পড়া পর্যন্ত রাশিয়ান সাহিত্য পড়া পরিপূর্ণ হয় না। অনেকগুলো বই থেকে কোনটা বেছে
নিব সেটা নিয়ে আমাকে একটু চিন্তা ভাবনা করতে হয়েছে। (দস্তায়েভস্কির জীবনে ভয়ংকর
অভিজ্ঞতা আছে। ফায়ারিং স্কোয়াড থেকে বেঁচে ফিরে এসেছেন!)
29.
গেরিলা থেকে সম্মুখ যুদ্ধে : মাহবুব
আলম
মুক্তিযুদ্ধের উপর
আত্মজৈবনিক উপন্যাস। পড়া হলে পুরো যুদ্ধের একটা ছবি পাওয়া যায়। বইটি আমার প্রিয়, মুক্তিযোদ্ধা
এই মানুষটি আরো বেশি প্রিয়।
কবিতা
1.
রূপসী বাংলা : জীবনানন্দ দাশ
কবিতার এক দুইটি বই না
দিলে কেমন হয়? সবারই এই বইয়ের অন্তত একটা কবিতা মুখস্ত করা উচিত। (আমি একবার ঘোষণা
দিয়েছিলাম, কেউ যদি সবগুলো কবিতা মুখস্ত করে আমাকে জানায় তাহলে তাকে আমি একটা বই উৎসর্গ করব।)
2.
রুবাইয়াৎ-ই-ওমর খৈয়াম
: কাজী নজরুল ইসলাম
(অনূদিত)
কেউ এটা
পড়লে নিজের অজান্তেই এই অসাধারণ রুবাইয়াৎগুলো আওড়াতে থাকবে। কে না শুনেছে, “এক
সোরাহী সূরা দিও, একটি রুটির ছিলকে আর...”
ভ্রমন কাহিনী
রসবোধ শব্দটির অর্থ কী
কেউ যদি জানতে চায় তাহলে তাকে এটা পড়তে হবে।
গল্প
1.
গল্পগুচ্ছ : রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুর
আমি মনে করি একজন
যতক্ষণ পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ না পড়ছে ততক্ষন সে পুরোপুরি বাঙালি হতে পারবে না। তার
ভাষা কঠিন মনে হলেও জোর করে পড়তে হবে। গল্পগুচ্ছের গল্পগুলোতে একই সাথে আছে
বুদ্ধিমত্তা, রসবোধ আর অসাধারণ ভাষা। সবগুলো না পড়লেও কিছু গল্প সবাইকে পড়তে হবে,
পড়তেই হবে।
2.
বরযাত্রী : বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় নয়, বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়! এই বইটিও
আমাদের পারিবারিক বই, আমার বাবা পড়ে শোনাতেন আর আমরা গোল হয়ে বসে শুনতাম। খুবই
মজার একটা বই।
3.
গল্প সমগ্র : হুমায়ুন আহমেদ
আমি মনে করি হুমায়ুন
আহমেদের সর্বশ্রেষ্ঠ লেখা হচ্ছে তার ছোটগল্পগুলো। কেউ যদি তার একটা অসাধারণ উপন্যাস
পড়তে চায় আমি তাকে বলব “মধ্যাহ্ন” বইটা পড়তে। (আমার মাঝে
মাঝে নিজেরই বিশ্বাস হতে চায় না আমি তার আপন ভাই!)
4.
The
Arabian Nights : Grosset & Dunlap
আগেই বলে রাখি আমি আদি
এবং অকৃত্রিম আরব্য রজনীর কথা বলছি। পশ্চিমাদের লঘু করে ফেলা শর্ট কাট ডিজনি
টাইপের আরব্য রজনীর কথা বলছি না।
5.
The
Adventures of Sherlock Homes : Arthur Conan Doyle
কিছু ডিটেকটিভ গল্প না
থাকলে কেমন হয়? আর ডিটেকটিভ গল্প আর্থার কোনান ডায়াল থেকে ভালো কে লিখতে পারবে?
(কিছু ভূতের গল্পও দেওয়া উচিত ছিল, দেয়া হল না।)
নন-ফিকশান
1.
Sapiens
: Yuval Noah Harari
সবাই এতদিনে নিশ্চয়ই এটা
পড়ে ফেলেছে। এই বইটা যত মজার তার লেখা অন্যগুলো সেরকম না। আমি অবশ্যি এই বইয়ে তার
বিজ্ঞান নিয়ে বিশ্লেষণের সবকিছু মানতে পারিনি, কিন্তু তাতে কিছু আসে যায় না, সবাই
সবকিছু তো নিজের মতই ব্যাখ্যা করবে। সবার এই বইটা অবশ্যই পড়া উচিত।
2.
Black
Holes & Time Warps : Kip S. Thorne
বিজ্ঞান নিয়ে একটা বই না
দিলে কেমন হয়? আর বিজ্ঞান নিয়েই যদি পড়ব তাহলে ব্ল্যাক হোল আর টাইম মেশিন নিয়ে কেন
নয়? (আমি যখন ক্যালটেকে ছিলাম, কিপ থর্নের অফিস ছিল আমার অফিসের খুব কাছে! তখন তার
মাথায় লম্বা চুল ছিল, এখন ন্যাড়া! ২০১৭ সালে নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন।)
ইতিহাস
1.
The
Rise and Fall of the Third Reich : William Shirer
বিশাল বই। কেউ পড়তে চাইলে
মোটামুটি আটঘাট বেধে বসতে হবে। তবে পড়ে শেষ করতে পারলে বুকে থাবা দিয়ে বলতে পারবে,আমি
“আমি রাইজ এন্ড ফল অফ থার্ড রাইখ” পড়েছি।
2.
Forgotten Ally: Chinas World war II :
Rana Mitter
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের কথা বলা হলেই সবাই ইউরোপের যুদ্ধের কাহিনী বলে, কিন্তু চীন
রাশিয়ার কী ভয়ানক অভিজ্ঞতা হয়েছিল তার কথা কেউ বলে না। এটা চীনের কাহিনী, পশ্চিমা
লেখক বলে কমিউনিজম নিয়ে একটু এলার্জী আছে কিন্তু তারপরেও অনেক তথ্য পাওয়া যাবে।
3.
Rape
of Nanking : Irish Chang
এই বইটা লিখে আইরিশ
চ্যাঙ সুইসাইড করেছিলেন। একটা বই লিখে কেন একজন মানুষ সুইসাইড করে সেটা জানতে হলে
এই বইটা পড়তে হবে।
4.
একাত্তরের দিনগুলি : জাহানারা ইমাম
বাংলাদেশের সবার এই বইটা
পড়তেই হবে। আমার পড়তে অনেক কষ্ট হয়েছে, অন্যদের কেমন লাগবে জানি না। আমি জাহানারা
ইমামকে বলেছিলাম, পড়তে এতো কষ্ট হয় যে আমি এটা পড়ে শেষই করতে পারি না। তখন
জাহানারা ইমাম আমাকে বলেছিলেন, তুমি চিন্তাও করতে পারবে না কীভাবে আমি বুকে পাথর
বেঁধে এই বইটা লিখেছি।
5.
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস : মুহম্মদ জাফর ইকবাল
খুবই বিনয়ের সাথে নিজের
একটা বই দিলাম, এটা বই নয়, একটা পুস্তিকার মত। মাত্র ২২ পৃষ্ঠার বই, অনেক
খাটাখাটুনি করে লিখেছিলাম!
6.
Witness
to Surrender : Siddiq Salik
পাকিস্তানীদের চোখে মুক্তিযুদ্ধের
ইতিহাস পড়া একটা অন্যরকম অভিজ্ঞতা!
জীবনী / আত্মজীবনী
1.
অসমাপ্ত আত্মজীবনী : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
ভাগ্যিস এই বইটার
পাণ্ডুলিপিটা রক্ষা পেয়েছিল তাই আমরা এই অসাধারণ মানুষটার চিন্তা ভাবনার জগতে
একটুখানি উঁকি দিতে পেরেছি। আমি এই বইটাকে মনে করি রাজনীতি শেখার একটা পাঠ্যবই।
2.
Surely
you are Joking Mr. Feynman : Richard Feynman
ক্যালটেকে আমি ফাইম্যানকে
পেয়েছিলাম, এই বইটাতে তখন আমি তার অটোগ্রাফ নিয়ে রেখেছিলাম। অসম্ভব মজার একটা বই।
বিজ্ঞানীরা যে মজার মানুষ হতে পারে এই বইটা তার প্রমাণ।
3.
Muhammad
: Karen Armstrong
ক্যারন আর্মস্ট্রং যখন
এই বইটা লিখতে শুরু করেছিলেন তখন সবাই তাকে বলেছিল, সর্বনাশ! এরকম কাজ করতে যেও
না, মুসলমানরা তোমাকে খুন করে ফেলবে। বইটা প্রকাশ হবার পর দেখা গেল, মুসলমানরাই
এখন তাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে!
4.
Long
Walk to Freedom : Nelson Mandela
নেলসন ম্যান্ডেলার
আত্মজীবনী না পড়লে একজন সত্যিকার নেতার আত্মত্যাগের কথা পুরোপুরি জানা যায় না।
কমিক
1.
Calvin
and Hobbes : Bill Watterson
বইয়ের তালিকায় আমি একটা
কমিক দিয়ে রেখেছি? আমার কী মাথা খারাপ হয়েছে? না, আমার মাথা খারাপ হয়নি। এই
কমিকগুলো না পড়লে, ছবিগুলো না দেখলে পড়া অসমাপ্ত থেকে যাবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ তালিকাটি ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যার এর অনুমতি নিয়ে কান পেতে রই ব্লগে প্রকাশ করা হয়েছে।
Sir, i see that you have no epic fantasy book series in your list. I would really suggest you to read A Song of Ice and Fire. I think every book lover should read it before he/she dies.
ReplyDeleteEpic fantasy is a awesome genre for people who love to imagine.
I really really hope you will read it, A Song of Ice and Fire by George R.R. Martin.
A goodreads list of these books for convenience:
ReplyDeletegoodreads.com/review/list/18282238-masud-rashid?shelf=mzi-favorite
'লাল গোলাপ' না বইটার নাম সম্ভবত 'রক্তগোলাপ'
ReplyDelete'লাল গোলাপ' না বইটার নাম সম্ভবত 'রক্তগোলাপ'
ReplyDelete